শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস: হতাশায় রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা, ফাইল ছবি

আবদুল আজিজ:
আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প এখন কক্সবাজারে। নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জাতিগত স্বীকৃতি আর নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চান। বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট এসব রোহিঙ্গাদের আবেদন তাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার। তাই, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে আদৌ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রোহিঙ্গারা। ফলে এ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান নিয়ে আশাহত তারা।

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৭ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে আসা মিলিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মূখে রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে দাবী করে আসছে। এছাড়া জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের চুক্তির পরও নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে শংকিত রোহিঙ্গারা। তাদের প্রধান দাবী রোহিঙ্গা হিসেবে তাদের জাতিগত স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব প্রদান, নিজ ভিটে-মাঠি ফেরত দেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিলে তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার এলাকার ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার।

উখিয়ার বালুখালী ২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়ুব আলী মাঝি কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘দীর্ঘ ৪বছরের সময় ধরে আমরা বাংলাদেশে অবস্থান করছি। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের চাল-চাতুরির কাছে হেরে গেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আমরা যেকোন মূল্যে মিয়ানমার ফেরত যেতে চাই’।

শুধু মোহাম্মদ ইদ্রিস ও আয়ুব আলী মাঝি নয়, তাদের মত উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল হাকিম, সেগুপা বেগম, লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ রোহিঙ্গারা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলে কেবল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে।

রোহিঙ্গা শরনার্থী কমিউনিটির সগ-সভাপতি মাষ্টার আব্দুর রহিম কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, বর্তমানে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরো জটিল হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে তার রায় হলে এবং জাতিসংঘ জোরালো ভূমিকা পালন করলে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করলে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে বলে এই মত প্রকাশ করেন এই রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, সঠিক উদ্যোগ না নেয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেমনি ব্যর্থ হয়েছে তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী অবস্থান করায় রোহিঙ্গাদের কারণে আর্তসামাজিক সহ শান্তিশৃঙ্খ্যলা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের একমাত্র কাম্য। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ক্রমশ জটিল হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসা শুরু হয়। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণবাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। তবে কক্সবাজারবাসীর মানবিকতা প্রশ্নবোধক হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা নানাভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং সহিংস্য হয়ে উঠেছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION